চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা বছরের শেষ দিন।  যা বাঙালির এক অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে পরিচিত। বাংলা বছরের শেষ দিনে এসে পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয় এই দিনে। এই দিনটি বসন্তের বিদায় ও গ্রীষ্মের সূচনা হয়। গ্রীষ্ম মানে রুখা-শুখা, গ্রাম-বাংলার বুক থেকে যেন মাটির রস এবং জীবনের রস শুষে নিতে চায় প্রকৃতি। এই রুখ-শুখা প্রকৃতির আগমন নতুন করে এবং নতুন রূপে কিছু পাওয়ার জন্যই চৈত্র সংক্রান্তির অবতারণা।

প্রতি বছর গ্রাম বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন। এ দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, দান,  ব্রত ও উপবাস করে থাকেন। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। এদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজন করা হয় মেলা, উৎসব, হালখাতা, লাঠিখেলা, গান, সংযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান। অনেক অঞ্চলে চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব – চড়ক গাজন।

চৈত্র সংক্রান্তির কাহিনির মধ্যে দিয়ে সামনে আসে বাংলার সমাজ জীবনের চালচিত্র, জনজীবন ও সংস্কৃতি।

প্রতিটি বাংলা মাসের শেষ দিনকে বলা হয় সংক্রান্তির দিন। একসময় বাংলায় প্রতিটি ঋতুরই সংক্রান্তির দিন উৎসবের আমেজে পালন করা হতো। বলা হতো বাঙালির বার মাসে তোরো পার্বণ। কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে চিরায়ত বাঙালীর বহু উৎসব। তবে আজও আগলে রেখেছে দুটি সংক্রান্তি এবং নববর্ষ উৎসব। দুটি সংক্রান্তির একটি চৈত্র সংক্রান্তি, অপরটি পৌষ সংক্রান্তি।

এক অর্থে সংক্রান্তি ধারণাটি এমন যে কালের আবর্তে অসীমের মধ্যে সাঁতরে, সূর্য এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে (মীন রাশিতে প্রবেশ করে) গমন করে। ছুটে চলে সময়, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর অবিরাম চলে ক্রান্তির সঞ্চারে। অর্থাৎ এক ক্রান্তি বা প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত বা ক্রান্তিতে যায়। এ দিনকে সূর্য সংক্রান্তিও বলা হয়।

চৈত্রের শেষ, বৈশাখের শুরু; চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ। বাঙালি সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব। তবে দুই উৎসবের মাঝে চৈত্র সংক্রান্তি ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে বাঙালি কিংবা বাংলার মানুষ পালন করে। কখনো ধর্মীয় বিশ্বাস, কখনোরা আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর লোক সংস্কৃতির মেলবন্ধন এই দিনটি ঘিরে।